Categories
See All >
কনুইয়ে আঘাতে বৈদ্যুতিক শকের অনুভূতি কেন হয়

কনুইয়ে আঘাতে বৈদ্যুতিক শকের অনুভূতি কেন হয়

Health Blogs
Hit Count : 181

ছেলেবেলায় কোনো বন্ধুর হাতের কনুইয়ে টোকা দিয়ে বৈদ্যুতিক শক খাওয়ানোর মধুর স্মৃতি কার না আছে! আপনি নিজেও হয়তো এমন শক খেয়েছেন। আর নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, শরীরের আর কোথাও টোকা দিলে এমন তীব্র ব্যথা ও ঝিমঝিমানির মিশেলে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় না! কিন্তু  প্রশ্ন হল এ অনুভূতি  কেন হয়? 

 



কারনঃ

এ মজার অনুভূতির জন্য দায়ী  হল  ফানি  বোন। নামটা বেশ মজার না। প্রথমে আমাদের  জানতে হবে  ফানি  বোন কী? আর কেন এই আজব নাম দেওয়া হলো ?

ফানি  বোনঃ

কনুইয়ের যে জায়গায় টোকা দিলে বা আঘাত পেলে বৈদ্যুতিক শকের অনুভূতি হয়, সে জায়গার নাম ‘ফানি বোন’। ফানি বোনের অবস্থান মূলত আমাদের ত্বকের পৃষ্ঠের কাছাকাছি  অবস্থিত।



 

ফানি বোন’ মুলত  কোনো বোন বা হাড় নয়, এটি একটি স্নায়ু বা নার্ভ। বৈজ্ঞানিকভাবে ফানি বোনের নাম ‘আলনার নার্ভ’ এবং এটি হাতের প্রধান তিনটি স্নায়ুর একটি। আমাদের হাতের বাহুতে একটি লম্বা হাড় থাকে, যার নাম ‘আলনা’। এই হাড়ের নিচের অংশ নিয়ে  স্নায়ুটি কবজি পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি মতিষ্ক থেকে শুরু হয়ে আমাদের ট্রাইসেস্প পেশি এবং এরপর আলনার ভেতরে প্রবেশ করে । আর শেষ হয় আনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলে ।  এই স্নায়ুর মাধ্যমে আমাদের আঙুলের ডগার কিছু তথ্য মস্তিস্কে প্রবাহিত হয়। এটি হাতের কিছু চলাচল নিয়ন্ত্রণও করে।

 

কেন এই বিচিত্র নাম ?

 





অনেকটা  ‘Humorous’ – এর মতো শোনায়, যার অর্থ ‘হাস্যকর’। যেহেতু আলনার নার্ভের উৎপত্তিস্থলও একই, তাই এটির এমন নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে।
আরেকটি কারন  হচ্ছে—যেহেতু আলনার নার্ভে হালকা আঘাতেও মানুষ তীব্র ব্যথার বহিঃপ্রকাশ করে, তাই ব্যাপারটা কিছুটা হাস্যকরও বটে। এর থেকেই স্নায়ুটির এমন নামকরণ হতে পারে। তবে একেবারে নিশ্চিত করে কিছু বলা যায় না । 
 
কিউবিটাল টানেলঃ
আলনার নার্ভ ট্রাইসেস্প পেশি এবং এরপর আলনার  অস্থির মাঝে সুরক্ষিত থাকে । অর্থাৎ এই স্নায়ুর অধিকাংশ জায়গাতেই হাড়, পেশি ও চর্বি থাকে। তবে যখন এটি কনুইয়ের নিচের দিকে যায় তখন এটাকে একটি সরু পথ অতিক্রম করতে হয়। যার নাম 'কিউবিটাল টানেল'  ।
 


 

 

 


টানেলটি পার হওয়ার সময় যেখানে হাতের রেডিয়াস ও আলনা নামের দুটি হাড় মিলিত হয়েছে, সেখানে স্নায়ুটির একপাশ কনুইয়ের হাড়ের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং অন্যপাশেই থাকে আমাদের ত্বক। তার মানে স্নায়ুটির ওপরপৃষ্ঠে সুরক্ষা দেওয়ার মতো তেমন কিছুই নেই, আছে শুধু ত্বক। তাই এই স্থানেই স্নায়ুটি সবচেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় থাকে।  এ স্থানে কিছুতে আঘাত লাগলে স্নায়ুটি সংকুচিত হয়ে যায়।
আলনার নার্ভ এনট্র্যাপমেন্টঃ
যুক্তরাষ্ট্রেরক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের অর্থোপেডিক এবং রিউমাটোলজিক ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডমিনিক কিং বলেন, ‘স্নায়ুটি যখন এই টানেল পার হয়, তখনই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে। যখন স্নায়ুটিতে আঘাত লাগে এবং অন্যপাশে শক্ত কিছুর (কনুইয়ের হাড়) সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখন এটি সংকুচিত হয়ে যায়।’এই সংকোচনকে বলে ‘আলনার নার্ভ এনট্র্যাপমেন্ট’। 

 

 



 


ডমিনিক কিং  আরও বলেন, ‘আমাদের শরীরের যেকোনো অনভূতি আমরা স্নায়ুর মাধ্যমে বুঝতে পারি। দীর্ঘ আলনার নার্ভটির অবস্থান আমাদের ত্বকের একদম কাছাকাছি। তাই এখানে আঘাত পেলে অনেকটা বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মতো অনুভূতির জন্ম দেয়।’

সর্বশেষে  আমরা বলতে পারি, আলনার নার্ভে আঘাত পেলে হাতের বড় কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই বলে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন। তবে এখানে সামান্য আঘাতেও তীব্র ব্যথা যিনি সহ্য করেছেন, তিনি হয়তো এই স্নায়ুকে সবসময় সুরক্ষিতই রাখতে চাইবেন। তবে যা ই হোক, বিচিত্র অভিজ্ঞতার উৎস হিসেবে এর জুড়ি নেই!

December 7, 2021/ by Erona Moumita

Department of ICE (BAUET).

Facebook: https://www.facebook.com/erona.moumita.9/

  

তথ্যসূত্রঃ

1.      https://www.sciencebee.com.bd

2.      https://www.prothomalo.com

3.      https://zeenews.india.com