Categories
See All >
মাথা ব্যথার ধরন ও তার পরিত্রাণের উপায়

মাথা ব্যথার ধরন ও তার পরিত্রাণের উপায়

Health Blogs
Hit Count : 214

ব্রেইন ও হাড়ের আবরণ তার চারপাশের রক্তনালি, নার্ভ তাদের আবরণ, মাথার চামড়ার নিচের মাংসপেশি, চোখ, সাইনাস, কান ও ঘাড়ের মাংসপেশির ইত্যাদির প্রদাহ এবং টানই মূলত মাথাব্যথার প্রধান কারণ।

প্রতিটি মাথাব্যথার আলাদা আলাদা সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে।মাথার একেক পাশে ব্যথার একেকটা কারণ। মাথা ব্যথার সাধারণ কিছু কারণ হলো

  • সাইনাস

  • ক্লান্তি

  • পানিশূন্যতা

  • পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব

  • দুশ্চিন্তা ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ

  • অতিরিক্ত ব্যথানাশক ব্যবহার বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

  • অতিরিক্ত মদ্যপান, ধূমপান

  • মাথায় আঘাত, টিউমার।




মাথা ব্যথার ধরণ ও তার চিকিৎসাঃ


টেনশনঃ বেশির ভাগ মাথা ব্যাথাই হয় টেনশন বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে। টেনশন হলেই শরীরের অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলো উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে, সেখান থেকে ‘অ্যাড্রিনালিন’ নামে বিশেষ এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরিত হয়। ফলে দেহকোষ থেকে হিস্টামিন, সেরাটোনিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য নিঃসৃত হয়। এতে মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ পড়ে মাথা ব্যথা শুরু হয়। মাথা ব্যথা ছাড়া অতিরিক্ত টেনশন থেকে হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদিও হতে পারে।

করণীয়ঃ সুশৃঙ্খল পারিবারিক জীবনাচরণ ও আনন্দময় ঝামেলাহীন জীবনই পারে টেনশন ও এর থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে।


মাইগ্রেন ও চিকিৎসাঃ মাথা ব্যথার মধ্যে মাইগ্রেনের ব্যথা অধিকতর তীব্র থাকে। মেয়েরা এতে বেশি ভুগে থাকে। সাধারণত মাথার একপাশে এই ব্যথা অনুভূত হয়। এটি সারাক্ষণ চিনচিন করে নয় বরং থেমে থেমে হয় এবং তা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। মনে হয়, কে যেন কিছুক্ষণ পর পর হাতুড়ি দিয়ে মাথায় পেটাচ্ছে। আলো ও শারীরিক পরিশ্রমে এ ব্যথা বাড়ে তাই রোগী চুপচাপ অন্ধকার ঘরে শুয়ে থাকতে ভালোবাসে। কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন পর্যন্ত মাইগ্রেন থাকতে পারে। অনেক সময় শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়া, মস্তিষ্কের রক্তসঞ্চালনে সমস্যা থেকেও এটি হতে পারে। কিছুটা জেনেটিক বলে পরিবারের কারো থাকলে মাইগ্রেন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

করণীয়ঃ মাইগ্রেনের পুরোপুরি নিরাময়ের কোনো চিকিৎসা এখনো নেই। তবে মাইগ্রেন এড়ানোর জন্য নিয়মিত কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া নিয়মিত কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে মাইগ্রেন থেকে দূরে থাকা যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।


ক্লাস্টার পেইনঃ প্রচন্ড যন্ত্রণাদায়ী এই ব্যথা সাধারণত চোখের চারপাশ জুড়ে অনুভূত হয়। এর কারণে চোখে পানি চলে আসা কিংবা নাকের মধ্যে অস্বস্তি হতে পারে। এই ধরনের মাথাব্যথা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।

করণীয়ঃ চিকিৎসকেরা এখনো এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করতে না পারলেও বলে থাকেন সাধারণত অ্যালকোহল এবং ধূমপানের প্রভাবে এমনটা হতে পারে। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।


সাইনাসঃ নাকের দু’পাশের হাড় ও কপালের হাড়ের ভেতর ছোট ছোট কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে। এগুলোকে সাইনাস বলে। এই ফাঁকা জায়গাগুলোতে বাতাস থাকে যা আমাদের মস্তিষ্কের ভারের সমতা বজায় রাখে। এসব সাইনাসের আবরণে প্রদাহ হলে বাতাস ও সর্দি জমে থাকে। এর ফলে সাইনাসগুলোর জায়গায় তীব্র ব্যথা হয়। এটাই সাইনোসাইটিস/সাইনাস হেডেক নামে পরিচিত। এই ব্যথার সঙ্গে নাক বন্ধ, সর্দি, হাঁচি-কাশি থাকে এবং জ্বরবোধ হয়।

করণীয়ঃ ব্যথার জন্য পেইন কিলার ছাড়াও অ্যান্টি হিস্টামিনজাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও নাক বন্ধের জন্য ন্যাসাল স্প্রে ব্যবহার করা হয়। গুরুতর ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

অ্যালার্মঃ প্রচন্ড মানসিক চাপের মূহূর্তগুলোতে আমাদের কপালে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় যার নাম ‘অ্যালার্ম’। উত্তেজনা কিংবা মানসিক কষ্টের কারণেও এমন হতে পারে। 


করণীয়ঃ এ ধরনের মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান শর্ত চাপ সামলে নিতে শেখা। ‘ব্রিদিং (শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া) এক্সারসাইজ’ এর বিরুদ্ধে ভালো কাজ করে। পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমেও এ ধরনের ব্যথা দূর করা সম্ভব।

সেকেন্ডারি হেডেকঃ ব্যথার উৎস যখন মাথার বাইরে থাকে, তখন তাকে সেকেন্ডারি মাথা ব্যথা বলে। যেমনগ্লুকোমা, দাঁতের সমস্যা, আঘাত, মস্তিষ্কের টিউমার, সিজার, ব্রেনের রক্তনালিতে ইনফেকশন ইত্যাদি।

করণীয়ঃ কারো এ ধরনের মাথা ব্যথা থাকলে বিলম্ব না করে একজন স্নায়ু বা মেডিসিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে যেসব কারণে মাথা ব্যথা হচ্ছে, তা শনাক্ত করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। বিলম্ব করলে বরং জটিলতা বাড়ে।

ক্রনিক ডেইলি হেডেকঃ মাসের প্রতিদিনই চিন চিন করে মাথাব্যথা হওয়াকে ক্রনিক ডেইলি হেডেক বলে।

করণীয়ঃ দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঘুমের একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

হরমোনাল হেডেকঃ মেয়েদের শরীরের হরমোনের তারতম্যের জন্যে প্রায়ই মাথা ব্যথা হয়। একে হরমোনাল হেডেক বলে। সাধারণত মাসিকের সময় বা আগে-পরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায় বলে এই ব্যথা হয়। আবার জন্মনিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট সেবনের পর হরমোনের পরিবর্তনগুলোর কারণেও অনেকের মাথা ব্যথা বেড়ে যায়।। এছাড়া গর্ভাবস্থায়ও হরমোনের তারতম্যের জন্য মাথা ব্যথা হয়।

করণীয়ঃ নারীদের মনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথা হতে পারে। এর চিকিৎসায় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি উপকারী ফল বয়ে আনতে পারে। এ সময় টেনশনমুক্ত দৈনন্দিন জীবন নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত ঘুম, পানি পান ইত্যাদি বেশ সহায়ক।


সেক্সুয়েল হেডেকঃ স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময় বা আগে-পরে মাথা ব্যথা হতে পারে। এর নাম সেক্সুয়াল হেডেক। সাধারণত প্রচণ্ড এক্সারশনে ব্রেইনে রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে এ ধরনের ব্যথা হয়। এ ব্যথা খুব একটা তীব্র হয় না এবং সেরে যায় কিছুক্ষণের মধ্যে। এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ।

করণীয়ঃ এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেতে হবে।

সাইকোজেনিক পেইনঃ কখনো কখনো কোনো কারণ ছাড়াই মাথাব্যথা হয়। এমনকি মন খারাপ থাকলেও মাথাব্যথা হয়। একে সাইকোজেনিক পেইন বলে এবং এই ব্যথার সাইকোলজিক্যাল কারণ থাকে। সাইকিয়াট্রিক কাউনসেলিং ব্যতীত কখনোই এই ব্যথা ভালো হবে না।


ক্যাফেইন এর প্রভাবঃ প্রচুর কফিপানের অভ্যাস থাকলে সময় মতো কফি না পান করতে পারলে এক ধরনের মাথাব্যথা অনুভূত হয়।

করণীয়ঃ এমন অবস্থা দেখা দিলে ধীরে ধীরে কফি পান ত্যাগ করা উচিত। কারণ কফিতে থাকা ক্যাফেইন আসলে এক ধরনের নেশা উদ্রেককারী বস্তু।


December 05, 2021/ by Sifath Sultana

Department of ICE(BAUET).


তথ্যসুত্রঃ

  1. https://www.dhakapost.com/lifestyle/21153
  2. https://www.risingbd.com/prescription/news/214869
  3. https://www.jugantor.com/doctor-available/192740/%E0%A6%AF%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A5%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A6%B9%E0%A7%9F

  4. https://www.kalerkantho.com/print-edition/doctor-acen/2018/08/26/672921