Categories
See All >
শীতকালীন শাক-সবজি এবং ফলের পুষ্টি গুণাগুণ

শীতকালীন শাক-সবজি এবং ফলের পুষ্টি গুণাগুণ

Health Blogs
Hit Count : 208

শীতের সময় বাজারে বেশি দেখা যায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজপাতা, লাউ, ব্রকলি, মটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা ইত্যাদি। পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, এন্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও ভিটামিন।
অস্থিক্ষয় রোধে ও শরীরে রক্তকণিকা বা প্লাটিলেট গঠনে শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই এর ঘাটতি পূরণে খেতে হবে বেশি বেশি শীতকালীন শাক-সবজি। শীতকালীন শাক-সবজিতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ই; যা মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে আনে এবং চুল পড়া রোধ করে।
ফুলকপি ও বাঁধাকপি :
শীতকালীন সবজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রায় সবারই পছন্দের। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটমিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, ফলিক এসিড ও পানি। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও সালফার রয়েছে। ফুলকপিতে এমন কিছু উপাদান আছে,  যা কিডনির পাথর গলায় ও ক্যান্সার নিরাময়ে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। ফুলকপিতে কোনো চর্বির মাত্রা নেই। ফুলকপি তাই কোলেস্টরোলমুক্ত,  যা কিনা শরীরের বৃদ্ধি ও বর্ধনে বিশেষ উপযোগী। পাশাপাশি বাঁধাকপিতে রয়েছে ভিটামিন-সি ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। শরীরের হাড় শক্ত ও মজবুত রাখতে এবং ওজন কমাতে বাঁধাকপির জুড়ি নেই। তাছাড়া বাঁধাকপি আলসার প্রতিরোধে সক্ষম।
লালশাক ও পালংশাক :
মটরশুঁটি :
শীতকালীন সবজি মটরশুঁটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি; প্রতি ১০০গ্রামে পাওয়া যায় ১২৫কিলোক্যালরি। উদ্ভিজ আমিষের বড় ভাণ্ডার হল শিম। শিমে আমিষ ছাড়াও স্নেহ ও ফাইবার জাতীয় খাবার অংশ থাকে। শিমের আঁশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। রক্তে কোলেস্টরোলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলী ও প্লিহার শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে,  শিশুদের অপুষ্টি দূর করে এবং পুষ্টি প্রদান করে থাকে।
টমেটো :

পুষ্টিগুণে লালশাক ও পালংশাক অন্য শাকগুলোর তুলনায় একটু এগিয়ে। প্রতি ১০০গ্রাম লালশাকে রয়েছে প্রায় ৩৮০মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম;  অন্যান্য পুষ্টিগুণ ও অন্য শাকের তুলনায় লালশাকে বেশি।

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে উন্নত দেশের লোকজন টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্য, পালংশাক, মিষ্টিআলু ইত্যাদি খাবার প্রচুর পরিমাণে খেয়ে থাকে।ক্যালরিতে ভরপুর টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, যা মানবদেহের হাড় ও দাঁত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে।




তাছাড়া ভিটামিন-সি এর অভাবজনিত স্কার্ভি ও চর্মরোগ প্রতিরোধে টমেটো বেশ কার্যকরী। টমেটোতে বিদ্যমান অন্য এক উপাদান হল লাইকোপেনযা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এজন্য টমেটোকে অনেকে Intestinal antiseptic বলে থাকেন। টমেটোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে এন্টিঅক্সিডেন্টযা কিনা প্রকৃতির আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে।

গাজর :
গাজর স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। চোখ ও দাঁতের সুরক্ষায়, লিভার সুস্থ রাখতে ও ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে খেতে পারেন শীতকালীন সবজি গাজর। এতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, থায়ামিন, নিয়াসিন, ভিটামিনবি-৬, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে, ফাইবার, ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম।
গাজরে বিদ্যমান বিটা-ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে এবং গাজরে প্রয়োজনীয় ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। বেশি বেশি গাজর খেলে পেট ভরবে কিন্তু বেশি ক্যালরি যোগ হবে না। তাই শরীরের ওজন কমাতে ও সুস্থ ত্বক পেতে বেশি বেশি গাজর খান।
ব্রকলি :
ব্রকলি আমাদের দেশের শীতকালীন নতুন একটি সবজি, যা দেখতে অনেকটা সবুজ ফুলকপির মতো।ব্রকলিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।এ সবজিটি চোখের রোগ ও অস্থি বিকৃতিসহ প্রভৃতি উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ধনিয়াপাতা :
ধনিয়াপাতা এখন সারা বছর পাওয়া গেলেও মূলত এটি শীতকালীন সবজি। ধনিয়াপাতা সরাসরি সালাদ হিসেবে এবং রান্না  করে উভয়ভাবে খাওয়া হয়। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-কে ও ফলিক এসিড রয়েছে, যা আমাদের ত্বকের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। ধনিয়াপাতার ভিটামিনগুলো আমাদের ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি যোগায়, চুলের ক্ষয় রোধ করে, হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে এবং মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে।
শীতকালীন ফলফলাদি এবং তার উপকারিতা :
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেলসের সহজ ও সস্তা উৎস হল ফল। ফল রান্না ছাড়াই খাওয়া যায় বলে এসবের উপাদান অবিকৃত অবস্থায় দেহ কর্তৃক গৃহীত হয়, যা আমাদের বিভিন্ন রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। ফলে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের মিনারেলস যেমন- ক্যালসিয়াম, লৌহ, ফসফরাস এসব দেহের বিপাকীয় কার্যাবলি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও ফল অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, পানি এসব দেহে সরবরাহ করে দেহকে সুস্থ রাখে।
শীত মৌসুমে বাজারে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন জাতের কুল বা বরই, কমলালেবু, জলপাই, আমলকি, আপেল, সফেদা, ডালিম ইত্যাদি পাওয়া যায়। শীতের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে নানা জাতের কুল বা বরই। বরই হরেক রকম হয়ে থাকে যেমন- নারকেলিকুল, আপেলকুল, বাউকুল ইত্যাদি। শীতকালীন এই ফলটি বেশ উপকারী ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।

কমলা :
কমলায় রয়েছে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ফাইবার ও মিনারেলস, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। কমলালেবুকে ক্যান্সার প্রতিরোধক বলা হয়ে থাকে। শীতকালীন ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল হচ্ছে জলপাই। উচ্চ রক্তচাপ,  কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাকস্থলীর কোলন ক্যান্সার দূর করতে জলপাইয়ের জুড়ি নেই। এন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এ ফলে আরও রয়েছে ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-ই।

আমলকি :
ভিটামিন-সি’র রাজা হিসেবে খ্যাত শীতকালীন ফল আমলকি। ত্বক সুরক্ষা,  মাড়ি মজবুত করতে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আমলকি। সারাবছর পাওয়া গেলেও শীতকালে বেশি পাওয়া যায় প্রচুর আঁশযুক্ত ফল আপেল। এতে রয়েছে ভিটামিন-সি,  ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি১২, ভিটামিন-বি৬ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট।
আপেল :
আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে থাকে।
সফেদা :
শীতকালীন আর একটি ফল হল সফেদা। আমাদের দেশে এই ফলটি এক সময় তেমন একটা পরিচিত ছিল না। কিন্তু এখন এই ফলটি প্রিয়ফলের তালিকায় চলে এসেছে এর পুষ্টিগুণের কারণে। ক্যান্সার প্রতিরোধক, কোষ্ঠ্যকাঠিন্যদূর,  কিডনি সুরক্ষা ও সতেজ ত্বক ছাড়াও সফেদা কোলোস্টরোল ও ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। সফেদায় রয়েছে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, কপার, আয়রন ও ফাইবার।
বেদানা বা আনার :
শীতকালীন অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও রসালো ফলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেদানা বা আনার; অনেকে এটিকে ডালিম ও বলে থাকে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-সি। বেদানার রস কুষ্ঠরোগ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও হার্ট ভালো রাখতে বেশ উপকারী। তাই সবার উচিত,  সহজপ্রাপ্য শীতকালীন শাকসবজি ও ফলমূল গ্রহণ করে শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা এবং নিজেকে সুস্থ-সবল রাখা। পরিশেষে একটি কথাই বলতে হয়- সুস্থ দেহে সুস্থ মন; থাকুক সর্বক্ষণ।