চিকুন গুনিয়া কী?
চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস জনিত জ্বর যা আক্রান্ত মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এ রোগ ডেঙ্গু, জিকা’র মতোই এডিস প্রজাতির মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। রোগটি প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিস্তার দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে প্রথম এ ভাইরাসের প্রার্দুভাব দেখা যায়।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস কী?
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হওয়ার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলে।
চিকুনগুনিয়া কীভাবে ছড়ায় ?
এডিস ইজিপ্টি ((Aedes aegypti) এবং এডিস এলবোপিকটাস (Aedes albopictus) মশার মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। মশাগুলোর শরীরের ও পায়ের সাদা কালো ডোরাকাটা দাগ দেখে সহজেই চেনা যায়।
এ ধরনের মশা সাধারণত দিনের বেলা (ভোর বেলা অথবা সন্ধ্যার সময়) কামড়ায়। এছাড়াও চিকুনগুনিয়া ভাইরাস আক্রান্ত রক্তদাতার রক্ত গ্রহণ করলে এবং ল্যাবরেটরীতে নমুনা পরীক্ষার সময়ে অসাবধানতায় এ রোগ ছড়াতে পারে। এ মশাগুলো সাধারণত পরিষ্কার বদ্ধ পানিতে জন্মায় এবং যাদের আশপাশে এ রকম মশা বৃদ্ধির জায়গা আছে, সে সব মানুষেরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
চিকুনগুনিয়া লক্ষণঃ
(১) হঠাৎ জ্বর আসার সঙ্গে গিঁটে গিঁটে প্রচণ্ড ব্যথা।
(২) প্রচণ্ড মাথা ব্যথা,
(৩) শরীরে ঠাণ্ডা অনুভূতি (Chill),
(৪) বমি বমি ভাব অথবা বমি,
(৫) চামড়ায় লালচে দানা (Skin Rash)
(৬) মাংসপেশিতে ব্যথা (Muscle Pain)।
উপরের উপসর্গগুলো কারও মধ্যে দেখা দিলে- ওই ব্যক্তির চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। উপসর্গগুলো শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ভাইরাসটি (Serology Ges এবং RT-PCR) পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়। বাংলাদেশ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিটিউট (আইইডিসিআর)-এ চিকুনগুনিয়া রোগ নির্ণয়ের সকল পরীক্ষা করা হয়।
চিকুনগুনিয়া প্রতিকারঃ
চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গ ভিত্তিক। এর কোনও সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে, প্রচুর পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে এবং প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। গিটের ব্যথার জন্য গিঁটের ওপরে ঠাণ্ডা পানির স্যাঁক এবং হালকা ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। তবে প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিঁটের ব্যথা ভালো না হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে। কোনও কারণে রোগীর অবস্থা অবনতি হলে দ্রুত নিকটস্থ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রতিরোধ :
এ রোগ প্রতিরোধের কোনো টিকা নাই। ব্যক্তিগত সচেতনতাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।
মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। মশার কামড় থেকে সুরক্ষার উপায়ঃ
Ø শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢাকা রাখা (ফুল হাতা শার্ট এবং ফুল প্যান্ট পরা),
Ø জানালায় নেট লাগানো,
Ø প্রয়োজন ছাড়া দরজা জানালা খোলা না রাখা,
Ø ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা,
Ø শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করার মাধ্যমে মশার কামড় থেকে বাঁচা যায়।
Ø শিশু, অসুস্থ রোগী এবং বয়স্কদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
এডিস মশা নিধনে করণীয়:
Ø মশার উৎপত্তিস্থল যেমন- শহরের খাল, নালা, দুই বাড়ির মধ্যবর্তী অপরিচ্ছনন্ন স্থান, কাঁচা বাজার, সরকারি অফিস ও আবাসিক স্থাপনা জরুরি ভিত্তিতে পরিচ্ছন্ন করতে হবে।
Ø এডিস মশার বিস্তাররোধে অফিস ছুটিকালীন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের টয়লেটের কমোড অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে।
Ø নির্মাণাধীন ভবন এবং যেসব সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে না বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যাবে সেসব ব্যক্তি ও স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী বার বার জরিমানা করতে হবে।
Ø প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি ওয়ার্ডে সাব-কমিটি গঠন করে তাতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ২০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অর্ন্তভূক্ত করে সামাজিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে।
Ø মশকনিধন এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিতের স্বার্থে মন্ত্রণালয়, সব সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। সিটি করপোরেশনগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।
Ø সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ হিসেবে এলজিআরডি মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থার
Ø দায়িত্বশীল প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে একটি জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের করণীয় নির্ধারণ করে মন্ত্রীর স্বাক্ষরে একটি আধা-সরকারিপত্র পাঠানো হবে।
Ø কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একাধিক উদ্যোক্তা ও আমদানীকারককে কীটনাশক আমদানীর সুযোগ দিলে তা বাজারে সহজলভ্য হবে। এর ফলে মানুষ নিজ উদ্যোগে হস্তচালিত মেশিন দিয়ে নিজের আঙ্গিনার মশক নিধন করতে পারবে।
Ø সম্মিলিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে দুই সিটি করপোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেবে।
Ø ঢাকার খাল ও নালাগুলো একযোগে পরিচ্ছন্ন করার স্বার্থে এবং স্থাপনাগুলো পরিচ্ছন্ন করতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগ, রাজউক এবং জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিতে হবে।
Ø বর্তমানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে দীর্ঘমেয়াদী ছুটির কারণে জনসাধারণ ও যানবাহনের চাপ কম আছে। এই সময় পুরো ঢাকা শহরকে শতভাগ পরিস্কার করার সুযোগ সিটি করপোরেশনকে নিতে হবে।
যেহেতু এ মশা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত থেকে জীবাণু নিয়ে অন্য মানুষকে আক্রান্ত করে, কাজেই আক্রান্ত ব্যক্তিকে যাতে মশা কামড়াতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া।
December 7, 2021/ by Erona Moumita
Department of ICE (BAUET).
Facebook: https://www.facebook.com/erona.moumita.9/
https://bangla.bdnews24.com/lifestyle/article1336533.bdnews
https://www.ekushey-tv.com
https://www.bd-pratidin.com/editorial/2017/07/18/248487