তবে শীতকালে চুলের যত্ন গিয়ে উল্টে ক্ষতি করে ফেলছেন না তো? কারণ শীত আমাদের একটু অলস করে দেয়। ফলে চুলের যত্নে আমরা রেডিমেড কিছু হেয়ার প্যাক ব্যবহার করি। যা আমাদের চুলের অনেক সময় ক্ষতি করে ।ফলে ঘরোয়া উপাদানে তৈরী হেয়ার প্যাক ব্যবহার করাটা শ্রেয়। তাই চলুন জেনে নেই বিভিন্ন ধরণের চুলের জন্য হারবাল হোমম্যেড হেয়ার প্যাক । চুলের যত্ন নিতে প্রথমেই জানতে হবে চুলের ধরন সম্পর্কে। চুলের ধরন অনুযায়ী যত্ন নেওয়া উচিত । আগে চুলের ধরন জেনে নিন।
শুষ্ক চুল: যদি চুল রুক্ষ, ডগা ফাটা হয় তবে আপনার চুল শুষ্ক।
স্বাভাবিক চুল: স্বাভাবিক চুলের ক্ষেত্রে মাথার তেলের পরিমাণ ঠিক থাকে।
তৈলাক্ত চুল: শ্যাম্পু করার অল্প সময়ের মধ্যেই চুল তেলতেলে আর নেতিয়ে থাকলে বুঝবেন চুল তৈলাক্ত।
শুষ্ক চুলের যত্ন
শীতে যত্ন নিতে জবাফুল বাটা, ২ চা চামচ মধু, ২ চা চামচ আমলকীর রস, টক দই, ডিমের কুসুম, মেথি গুঁড়া ও ২ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন ঘণ্টাখানেক। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুলের উজ্জ্বল ও মসৃণ ভাব ফিরিয়ে আনতে আধা মগ পানিতে লেবুর রস ও চায়ের লিকার মিশিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে চুলের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা ফিরে আসবে। ঠাণ্ডা আপনার চুলকে কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না।
স্বাভাবিক চুলের যত্ন
স্বাভাবিক পরিচর্যাই যথেষ্ট। তবে হট অয়েল ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করতে পারেন সপ্তাহে দুই দিন। নিয়মিত চুল পরিষ্কার রাখুন। ন্যাচারাল কন্ডিশনিংয়ের জন্য চুলে তেল দিন। দিনে কয়েকবার মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াবেন, তাহলে চুলে যেমন জট হবে না তেমনি মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালনও ভালো থাকবে।বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন নাই কিন্তু চুল ভালো রাখতে পরিচর্যা জরুরি।
তৈলাক্ত চুলের যত্ন
এ রকম চুলের জন্য শুকনো রিঠা, শিকাকায়ি, আমলকী সারা রাত ভিজিয়ে পরদিন ফুটিয়ে ছেঁকে নিন। তরল মিশ্রণটি শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।সপ্তাহে দু’দিন বাড়িতে তৈরি হেয়ার প্যাক লাগান। ২ চা চামচ নিমপাতা গুঁড়া, ২ চা চামচ মেথি গুঁড়া, ২ চা চামচ আমলা, ২ চা চামচ টক দই, ১টি ডিমের সাদা অংশ, আধা কাপ উষ্ণ গরম পানি দিয়ে মিশিয়ে পুরো চুলে লাগিয়ে ঘণ্টাখানেক রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।
কিছু উপকারী টিপস
০১) চুল রুক্ষ ও মলিন হয়ে গেলে চুলের গোড়া এবং পুরো চুলে মধু দিয়ে আধা ঘণ্টা গরম তোয়ালে দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
০২) শীতকালে চুল হালকা গরম পানি দিয়ে ধোয়া উচিত। তবে কখনই খুব গরম পানি দিয়ে চুল ধোয়া যাবে না। এতে চুল পড়ে অনেক। শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
০৩) রাবার ব্যান্ড দিয়ে চুল বাঁধবেন না। বিশেষ করে চিকন রাবার ব্যান্ড গুলো।
০৪) আমরা কম বেশি সবাই শীতকালে চুল আগা ফাটা সমস্যায় পড়ি। এ সমস্যার আসলে একটাই সমাধান। যত টুকু চুলের ক্ষতি হয়েছে তত টুকু অংশ সমান করে কেটে ফেলা।
০৫) সকালে বের হওয়ার আগে আপনি রুক্ষ চুল নিয়ে বের হতে চাচ্ছেন না আবার তেল দিয়ে চুল চিপচিপে করেও বের হতে চাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে খুব সহজ একটি সমাধান আছে। একটি স্প্রে বোতলে সমপরিমাণ পানি আর অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এরপর আপনার চুলের উপর ২ বার স্প্রে করে নিশ্চিন্তে বের হয়ে যেতে পারেন। এতে আপনার চুল খুব রুক্ষ হয়েও থাকবেনা আবার তেল চিপচিপে হয়েও থাকবেনা। চুলের ময়েশ্চারের মাত্রাও ঠিক থাকবে। ফলে চুল দুর্বল হবে না।
০৬) ভেজা চুলে কখনও বের হবেন না। অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাসে ভেজা চুলে বের হলে কিউটিকেলের অনেক ক্ষতি হয়, ফলে চুল ঝরে পড়ে।
০৭) গোসলের আগে কিছুক্ষণ চুলে এ্যলোভেরা জেল ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে চুলের রুক্ষতা অনেক কমে যাবে।
০৮) শীতকালে চুল খোলা রাখার চেয়ে বেঁধে রাখা ভালো। কারণ বিভিন্ন গরম কাপড় বিশেষ করে উলের তৈরি কাপড়ের সাথে চুলের ঘষা লেগে চুলের ময়েশ্চার কমে যায়।
০৯) এ সময় ভেজা চুল থেকে ঠান্ডা লেগে যাবার ভয়ে অনেকেই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। এতে চুল পড়ে যাবার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়। কারণ হেয়ার ড্রায়ার মাথার ত্বক কে অতিরিক্ত শুষ্ক করে তোলে। ফলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয় আর খুশকির কারণে চুল পড়তে থাকে।
১০) চুল যেন রুক্ষ না হয় সেজন্য খুব সহজ একটি উপায় হচ্ছে রাতে ঘুমানোর আগে চুলে তেল দিন এবং শাওয়ার ক্যাপ পড়ে থাকুন। সকালে উঠে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অলিভ অয়েল দিতে পারেন।
সর্বপরি ,শীতকালে ত্বক ও চুলের যত্নে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে। শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর ত্বক ও চুলের জন্য প্রয়োজন। শিম, বরবটি, নানা রকম শাক, মটরশুঁটি, ফুলকপি ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। হাতের নাগালের সব ফলই প্রতিদিন খাবেন। যেমন আপেল, আমলকী, আমড়া।
Written by Erona moumita
31,December,2021
তথ্যসূত্র: